উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলতো মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্র। এরপর ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে অনলাইনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। এতে গত সাত বছরে আয় করেছে শতকোটি টাকা
উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলতো মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্র। এরপর ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে অনলাইনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। এতে গত সাত বছরে আয় করেছে শতকোটি টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে অতি কৌশলে শত শত তরুণীকে ফাঁদে ফেলে আধুনিক যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগে চক্রের মূলহোতাসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
অভিযুক্তরা হলেন: চক্রের মূলহোতা মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন, জাহিদ হাসান কাঁকন, তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত, সৈয়দ হাসিবুর রহমান, শাদাত আল মুইজ, সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি এবং নায়না ইসলাম।
বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহম্মদ আলী মিয়া।
সিআইডি বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলতো চক্রটি। এরপর ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অনলাইনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো।
আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ এবং আয়ের টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে।
মোহম্মদ আলী মিয়া বলেন, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া নামে ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ, লোভনীয় চাকরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে জোরপূর্বক তাদের দেহব্যবসায় নামানোর ভয়ংকর এ চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি।
চক্রটি মূলত উঠতি বয়সী তরুণীসহ যেসব তরুণী পারিবারিক ভাঙনের শিকার ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের টার্গেট করতো। চক্রটি কাজের সুযোগ দেয়ার নামে ইন্টারভিউতে ডাকতো। এরপর তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেয়ার কথা বলে আপত্তিকর ছবি নিতো। প্রাথমিকভাবে কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদামতো টাকা ও প্রয়োজন মেটাতো তারা। এরপর ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো বলেও জানান তিনি।
মেহেদী হাসান এবং তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে চক্রটি গড়ে তোলেন বলে জানান সিআইডি প্রধান। তিনি বলেন, তারা দুজনেই মেডিকেল শিক্ষার্থী। তারা চিকিৎসাবিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারে নানা অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো। গত ৭ বছরে তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তারা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে। নির্মাণ করেছে আলিশান বাড়ি। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে।