1. admin@dainikmanobadhikarsangbad.com : admin :
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ - দৈনিক মানবাধিকার সংবাদ
২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| গ্রীষ্মকাল| মঙ্গলবার| বিকাল ৫:১৪|

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

নিউজ ডেস্কঃ
  • Update Time : শুক্রবার, অক্টোবর ৭, ২০২২,
  • 301 Time View

কিছুতেই নাগালে আসছে না নিত্যপণ্যের দাম। আদা, ডাল, রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম আরো বেড়েছে গত এক মাসের ব্যবধানে। কিছু পণ্যের দাম আবার আগে থেকে বেড়ে স্থিতিশীল।

এছাড়া বাজারে সরু চাল, আটা, ময়দা, চিনি, আলু, লবঙ্গের দাম বেড়েছে গত মাসের তুলনায়। সীমাহীন কষ্টে কাটছে নিম্নআয়ের মানুষের। জীবন চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। দামের বাড়বাড়ন্তে কিছু পরিবার তাদের খাদ্যতালিকা থেকে বেশ আগেই ছাঁটাই করেছেন আমিষের পরিমাণ। এর মধ্যে আবার চোখ রাঙাচ্ছে ডিম-দুধের মতো প্রয়োজনীয় আমিষগুলোর দামও। বাড়তি দামের জন্য ব্যবসায়ীরা দুষছেন আমদানি ও পরিবহণ খরচ বৃদ্ধিকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরণের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে মিলেছে এ তথ্য। টিসিবি বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা আদা। বাজারে এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি কেজি আদা যেখানে গত মাসে ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে, সেটা এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আদার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে রসুনও। বাজারে এ পণ্যের দামও বেড়েছে। তবে আমদানি করা রসুনের চেয়ে দাম বেড়েছে দেশি রসুনের। প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে থাকা দেশি রসুন এখন ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আদার দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমদানিকারক ও শ্যামবাজার আড়ত মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ বলেন, ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা লোকসানে আমদানিপণ্য বিক্রি করছেন। এতে সরবরাহ কমছে, দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি হিসাব দিয়ে বলেন, চীনে প্রতি টন আদার দাম ১ হাজার ১৩০ ডলার। টাকায় যা প্রতি কেজি ১২৬ টাকার বেশি। সেটা পরিবহণসহ খরচ আরো কেজিতে ১২ টাকা। এছাড়া ঘাটতি ও অন্যান্য খরচ মিলে সেটা প্রায় ১৪৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি, যা পাইকারি বাজারে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় গিয়ে দাম আরো কিছুটা বাড়ছে। এ ব্যবসায়ী বলেন, ডলারের দাম বাড়ার পরেও বেশ কিছু সময় সরবরাহ চাপে বাড়তি দামে আমদানি করা বহু ব্যবসায়ী লোকসান করেছে। এজন্য এখন আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে গত একমাসের ব্যবধানে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম কোম্পানিভেদে বেড়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৫০ টাকা। এ নিয়ে চলতি বছর চতুর্থ দফায় বেড়েছে গুঁড়া দুধের দাম। এ বছর মার্চ, জুন ও আগস্টে তিন দফা দাম বেড়েছিল এ নিত্যপণ্যের। এমন পরিস্থিতিতে টিসিবি বলছে, মাসের ব্যবধানে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত। তবে বছরের ব্যবধানে এ দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে গত একমাসে অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগে যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো, সেটা এখন ৭০-৭৫ টাকা।

এছাড়া বাজারে গরিবের অন্যতম আমিষের উৎস ডিমের দাম চলতি মাসে আবার বাড়ছে। বড় বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম উঠেছে প্রতি হালি ৪৫ টাকা, যা খুচরা বাজার আর পাড়া-মহল্লার মুদিদোকান থেকে কিনতে লাগছে হালিতে ৪৭ থেকে ৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও যা ৩৮ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। এ হিসাবে পণ্যটির দাম মাত্র একমাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এছাড়া বাজারে সরু চাল, আটা, ময়দা, চিনি, আলু, লবঙ্গের দাম বেড়েছে গত মাসের তুলনায়।

এদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় বেশকিছু পণ্যের আমদানি-রফতানিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানির খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।

এসব বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমিষজাতীয় খাবারের দাম বেশি বাড়াটা ভিন্ন উদ্বেগের। সেটি পুষ্টিহীনতার শঙ্কার কারণ। অন্যান্য পণ্যের দামও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। তিনি আরো বলেন, কিছু পণ্যের দাম যৌক্তিকভাবে বেড়েছে বেশকিছু কারণে। তবে সে সুযোগ নিয়ে অন্যান্য পণ্যেরও দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার বাস্তবে যতটা বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দামে। এছাড়া দেশে কোনো পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ে সেটি পরবর্তীসময়ে সেভাবে সমন্বয় হয় না। দাম কমলেও সেটা বাজারে বাস্তবায়ন করতে চান না কোম্পানি বা বিক্রেতা কেউই।

এদিকে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ইফতেখার আহমেদ। কুড়ি হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। স্ত্রী আর এক সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। বেতনের পর সব হিসেব নিকেশ মিলিয়ে মাস শেষের আগেই দেখা যায় পকেট শূন্য। ফলে ধার করতে হয় পরিচিত বা সহকর্মীর কাছে। ইফতেখার বলেন, ২০ হাজার টাকা বেতনে হয়তো তিন চার বছর আগে চলতো। কিন্তু বর্তমানে তা অসম্ভব। কষ্ট করে ২০-২৫ দিন চলে, কিন্তু তারপর কাছের মানুষদের থেকে ধার নিতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো শহরে আর থাকা যাবে না, গ্রামে চলে যেতে হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, বাসা ভাড়া, পরিবহণ খরচসহ সব কিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইফতেখারের মতো এমন লাখো মানুষ রয়েছেন আর্থিক চাপে। রুবায়েত আহমেদ পড়াশোনা করছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুপুরে ক্লাস শেষে তিনটি টিউশনি পড়াতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। বাকিটা সময়ে প্রস্তুতি নেন সরকারি চাকরির। ফার্মগেটের একটি মেসে থাকেন ব্যাচেলর রুবায়েত। সাথে থাকেন আরো দুজন। কিন্তু হঠাৎ করে গত মাসে মেসের ভাড়া আর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে একজন মেস ছেড়ে দিয়েছেন। চাপ বেড়ে গেছে রুবায়েতরও। আগে যে টাকায় চলতে পারতেন, এখন আর তাতে খরচ সংকুলান হচ্ছে না। ফলে কাটছাঁট করতে হয়েছে অনেক খরচ। বন্ধ হয়েছে শখের কেনাকাটা, মাঝেমধ্যে ভালো কিছু খাওয়া বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা।

রুবায়েত বলেন, যে মেসভাড়া (খাবারসহ) ৪ হাজার ৫০০ টাকা ছিল, তো হয়ে গেছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাচলরদের খাবার ডিমের দামও এখন দ্বিগুণ। এছাড়া অন্যান্য খরচ তো আছেই। আমরা যারা ব্যাচেলর আছি, তারা টিউশনি বা ছোটখাটো চাকরি করে খরচ যোগাই। কিন্তু এভাবে খরচের মাত্রা বাড়তে থাকলে তো বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। মেস ম্যানেজারদের ভাষ্য, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে খরচ বাড়াতে হয়েছে। যদিও খরচ বাড়ানোর ফলে অনেকের মেসই খালি হয়ে গেছে।

ছোট মুদি দোকান চালান ব্যবসায়ী সাইফুল হক। বাসা নাখালপাড়া। মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে তার বসবাস। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। এতদিন ব্যবসা দিয়ে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল সংসার জীবন। তবে ইদানীং মেলাতে পারছেন না আয়-ব্যয়ের হিসাব। মাস শেষে থেকে যাচ্ছে ঘাটতি। সাইফুল হক বলেন, বেচাকেনা আগের চাইতে কমে গেছে। মানুষ প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত কেনে না। অনেকে বাকিতেও সওদা কেনে। মালপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণে কিনতে পারি না। এছাড়া নিজের খরচ তো আছেই। যে জিনিস কিনতাম ১০ টাকায়, তা কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। মায়ের ওষুধ, বাচ্চাদের পড়াশোনা, বাসাভাড়া সবমিলিয়ে একটা মন্দা সময় পার করছি।

ঢাকার পথে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন আসাদ উল্লাহ। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন জমা খরচ বাবদ হাতে থাকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে এক রুমের ছোট এক বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি। মাসে ভাড়া আসে ৩৫০০ টাকা। ইদানীং বুকে ব্যথা অনুভব করেন আসাদ উল্লাহ। শরীরের শক্তিও আগের মতো নেই। চিকিৎসকও দেখিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে বলেছিলেন রেস্টে থাকতে। তবে খরচের কথা ভেবে ওষুধও কিনেননি, সংসারের কথা ভেবে রিকশা চালানোও বন্ধ করেননি।

আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘রিকশা চালানো কমায়া দিলে চলুম কিভাবে। ঘরে মানুষ আছে, তাদের কথা ভাবতে হয়। তার ওপর আনাজপাতির দাম বাইড়া গেছে। আগে একটু ভালোমন্দ কিন্না খাইতে পারলেও এখন তাও হয় না। এখন মোটা চালের দামই ৫০-৬০ টাকা। আর অন্যান্য কিছুর দাম তো বাদই দিলাম। এভাবে চলতে থাকলে আমরা রিকশাওয়ালারা আর ঢাকায় থাকতে পারুম না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। © প্রকাশক কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত -২০২২

You cannot copy content of this page