1. admin@dainikmanobadhikarsangbad.com : admin :
সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও'র ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। - দৈনিক মানবাধিকার সংবাদ
২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| গ্রীষ্মকাল| বৃহস্পতিবার| সকাল ৭:১৯|

সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও’র ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : শনিবার, মে ১৪, ২০২২,
  • 605 Time View

সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

বছরের ৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরা পদায়ন করেন সাংবাদিক নির্যাতন করে আলোচিত সিনিয়র সহকারী সচিব নাজিম উদ্দিন। পদায়নের পর থেকেই অধস্তন ও এলাকাবাসীর কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন নাজিম উদ্দিন। মূলত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ত্রাস ছড়ায় এই সরকারি কর্মকর্তা।

সম্প্রতি পৌরসভায় কাজী বিরাজ হোসেন নামে অস্থায়ী এক কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা ঘুষ নেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীন। কিন্তু তাকে চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। বরং চাকরি হারিয়েছেন ঐ কর্মচারী।

এদিকে ঘুষ গ্রহন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি, সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে মাদক সেবন, মেয়রের অপসারণের চক্রান্ত, নিয়মবহিরর্ভূতভাবে ছুটি নেওয়া, নিয়মবহিরর্ভূতভাবে কর্মকর্তা কর্মচারিদের চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ করেন সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সরেজমিনে ঘুরে সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী সাথে কথা বলে আলোচিত-সমালোচিত সিইও’র বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী সাতক্ষীরা পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান খান বাপী বলেন, বিনা নোটিশে আমাকেসহ সাতজন কর্মচারীকে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

শুধু তাই নয়, তিনি আমাদের পৌরসভা চত্বরে দেখলে গুলি করে মারার হুমকি দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় পদায়নের পর থেকেই প্রধান নির্বাহী নাজিম উদ্দিনের ‘বিশ্বস্ত হাত’ হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন পৌরসভায় দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মরত কাজী বিরাজ হোসেন। যিনি ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী আদেশ পালন করে আসছেন।

অভিযোগ উঠেছে, এই অফিস সহকারীর দিকেই মিথ্যা সহানুভূতির হাত বাড়িয়েছিলেন নাজিম। বিরাজের চাকরি স্থায়ী করে দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখানো শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে বিরাজও প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে।

চাকরি স্থায়ী করে দেওয়ার কথা বলে বিরাজের কাছ থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার টাকা, ২২ ফেব্রুয়ারি ৯৫ হাজার টাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি ৩০ হাজার টাকা নেন নাজিম। ২৩ ফেব্রুয়ারি আরও ৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দেন বিরাজ। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর স্টেটমেন্ট দেখে যার সত্যতা পারয়া গেছে।

এদিকে, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা ২২ মিনিটে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা, পরে ২৫ হাজার টাকা ও পুনরায় ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় নাজিমকে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাবতীয় লেনদেন সবই নাজিম তার ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর (০১৭৫১৪১****) থেকে করেছেন।

এছাড়া, নাজিম উদ্দিনের কথা মতো ১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ইসলামি ব্যাংকের কলারোয়া শাখার শাহিদা নামের একজনের হিসাবে (নং ২০৫০১৬৯০২০৩৬০****) ৫০ হাজার টাকা জমা দেন বিরাজ।

গত ১০ মার্চও একই অনুরোধে এবি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখায় মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান নামের একজনের একাউন্টে (হিসাব নং- ৪২১৪৫৭৮৪৭****) ৯ হাজার টাকা জমা দেন।

লেনদেনের সব তথ্য প্রমান ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে নিশ্চিত করা গেছে।

অন্যদিকে চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে বিরাজের মাধ্যমেই অফিস সহায়ক রুবেল ও রেজার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা নেন নাজিম। ভয়-ভীতি দেখানোর কারণে বিষয়টি ওই দুজন তারা গোপন রেখেছেন বলে জানান বিরাজ।

এদিকে ৬ এপ্রিল আনুমানিক দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে কাজী বিরাজকে ২১২ নং কক্ষে ডেকে রুমের দরজা বন্ধ করে দেন নাজিম। এরপর বিরাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন।

যদি নিশ্চিত করেছেন তখন সেখানে উপস্থিত তাকা পৌরসভার বড়বাবু প্রশান্ত প্রসাদ ব্যানার্জী, তহমিনা খাতুন এবং অফিস সহায়ক কামাল উদ্দিন।

সরেজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, কথায় বনিবনা না হলে কর্মচারীদের গালিগালাজ ও ‘ক্রসফায়ারে’র হুমকি দেন বলে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।

এদিকে, নাজিম উদ্দিনের আচরণে ভীত হয়েই এ শাখার কর্মচারীরা পৌর মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতেও ক্ষুব্ধ হন নাজিম।

পানি সরবরাহ শাখার কয়েকজন কর্মচারী জানান, সিইও তার খেয়াল-খুশি মতো পানি সরবরাহ শাখার যে কাউকে তার অফিস রুমে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ ক্রসফায়ার ও জীবন নাশের হুমকি দেন।

এছাড়া চাকরিচ্যুত, জেল জরিমানা করার হুমকিও দেন। প্রায়ই বলেন, যে কাউকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি।

নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ পানি সরবরাহ শাখার মো. আনারুল ইসলামকে তিনি তার রুমে ডেকে অসদাচরণ করেন। ১৭ এপ্রিল আরেক কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমানকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ক্রসফায়ারের হুমকি দেন।

১৯ এপ্রিল একই শাখার মো. আরিফুর রহমান, শেখ মোস্তাফিজুর রহমান ও আরিফ আহম্মেদ খানকেও রুমে ডেকে শাসিয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মেয়রের কাছে কী অভিযোগ দিয়েছো?’।

এমনটা বলেই তিনি ওই তিন জনের ওপর চড়াও হন। এরপর হাজিরা খাতা এনে তাদের নাম কেটে বাতিল ঘোষণা করেন এবং মৌখিকভাবে বলেন ‘তোরা কাল থেকে পৌরসভা গেটের ভেতরে ঢুকবি না।’ এরপর থেকেই ওই কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সিইও নাজিম উদ্দিনের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি মিডিয়ায় কথা বলতে রাজি হননি।

সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, পৌরসভার মেয়র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। তবে সেটির তদন্তের নির্দেশনার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সোমবার চিঠি পেয়েছি। অচিরেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

উল্লেখ্য:

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। © প্রকাশক কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত -২০২২

You cannot copy content of this page