সাতক্ষীরার নলতায় ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি)’র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলায়মান হোসেন ওরফে সালমানকে (২৫) তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। শনিবার রাতে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মোহাম্মদ হানিফ বাদি হয়ে চারজনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-১৭। নির্যাতনের ঘটনার মুলহোতা আইএইচটি’র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ ছাড়াও হুকুমদাতা হিসেবে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেডিওলোজী বিভাগের শিক্ষক সাইদী হাসান ও তার অনুসারী ম্যাটস’র দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু বকর রানাকে ওই মামলায় আসামী করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, শিক্ষার্থী সোলায়মানকে নির্যাতনের ঘটনায় শনিবার রাতেই তার বাবা বাদি হয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে উল্লেখ করে ওসি বলেন, কেবলমাত্র কোচিংয়ে না পড়ার কারনে সোলায়মানকে নির্যাতন করা হয়েছে, নাকি এর পিছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে মামলার আসামীদের দ্রæত গ্রেপ্তারের দাবিতে রোববার দুপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পাল্টা মানববন্ধন করেছে আইএইচটিতে পড়–য়া নির্যাতিত শিক্ষার্থী সোলায়মানের সহপাঠী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে আইএইচটি’র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলায়মান হোসেনকে তার রুম থেকে ডেকে ওই প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ তলায় ৪০৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রশিদ। এসময় তারা লোহার রড ও পাইপ দিয়ে পিটিয়ে সোলায়মানের মাথা ফাঁটিয়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেতলিয়ে দেয় তারা। পরে তার সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন নির্মম নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী সোলায়মান হোসেন। এঘটনার পর শিক্ষক সাইদী হাসানের কোচিংয়ে না পড়ার কারনে নাহিদ ও রশিদ মিলে তাকে নির্যাতন চালিয়েছে বলে গনমাধ্যমে জানায় আহত সোলায়মান।
এদিকে সাতক্ষীরার নলতায় ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি)’র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলায়মান হোসেন ওরফে সালমানকে (২৫) তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষক সাইদী হাসান জড়িত নয় বলে উল্লেখ করে এবং তদন্তপূর্বক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছেন আইএইচটি’র শিক্ষার্থীরা।
রবিবার বেলা ১১টায় নলতা ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র সামনে প্রায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন ওই প্রতিষ্ঠানটিতে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। সোলায়মান হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং শিক্ষক সাইদী হাসানকে নির্দোষ দাবী করে লেখা প্লাকার্ড হাতে মানববন্ধনে দাড়িয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার পরিজন ছেড়ে আইএইচটিতে পড়তে আসে। সোলায়মানের মতো অন্য কোন শিক্ষার্থীর সাথে ভবিষ্যতে যাতে এধরণের নির্মম নির্যাতনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রকৃত অপরাধীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। একইসাথে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় শিক্ষক সাইদী হাসানকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে দাবী করে শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ এবং নির্যাতিত শিক্ষার্থী সোলায়মানের বয়ানে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে তার সহপাঠী নাহিদ হাসান এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুর রশিদ মিলে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। তাছাড়া নির্যাতনকালীন সময়ে আইএইচটির শিক্ষক সাইদী হাসান ঘটনাস্থলে ছিলেননা। অথচ পুরো ঘটনার দায় পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক সাইদী হাসানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানববন্ধন থেকে শিক্ষক সাইদী হাসানকে ফাঁসানোর নিন্দা ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া, মেহেদী হাসান, বিউটি খাতুন, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বিউটি পারভীনসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। এসময় ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে অধ্যায়নরত শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে আইএইচটি’র তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলায়মান হোসেনকে তার রুম থেকে ডেকে ওই প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ তলায় ৪০৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রশিদ। এসময় তারা লোহার রড ও পাইপ দিয়ে পিটিয়ে সোলায়মানের মাথা ফাঁটিয়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেতলিয়ে দেয় তারা। এঘটনার পর শিক্ষক সাইদী হাসানের কোচিংয়ে না পড়ার কারণে নাহিদ ও রশিদ মিলে তাকে নির্যাতন চালিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচার দেয় নির্যাতনের শিকার সোলায়মান। কিন্তু কেবলমাত্র কোচিংয়ে না পড়ার কারণে এধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন আইএইচটি’র অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। নির্যাতনের ঘটনার অন্তরালে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার পূর্বের কোন বিরোধ বা অন্যকোন ঘটনা লুকিয়ে আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
অপরদিকে, ছাত্র সমাজের ব্যানারে রবিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, নির্যাতিতের বাবা মো: হানিফ, জুবায়ের হোসেন শাকিল, রিপন হোসেন, পাভেল, ফয়সাল হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আইএইচটি’র খÐকালিন শিক্ষক হয়ে সাঈদী হাসান কোচিং করতে বাধ্য করতে বাধ্য করেছেন অনেক শিক্ষার্থীকে। কোচিং না করায় সালমানকে গত বছর রেডিওলোজি বিভাগের মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। এ ছাড়া অনেতিক উপায়ে পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে সাঈদার হাসান বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে মাথা পিছু ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। এ সব কাজে তিনি রানা, রশিদ ও নাহিদকে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। সাঈদার হাসানের নির্দেশনা অনুযায়ি বৃহস্পতিবার রাতে নাহিদ হাসানের কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে হাত ও পা বেঁধে সালমানকে লেঅহার রড ও জিআই পাইপ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার করতে হবে। সালমানকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: গোলাম মোস্তফা জানান, সালমানের উপর নির্যাতনের ঘটনায় তার বাবা মো: হানিফ বাদি হয়ে শিক্ষক সাঈদার হাসান ও তিন ছাত্রের নাম উল্লেখ করে শনিবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।