বাংলা পঞ্জিকায় যুক্ত হলো নতুন বছর। আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪২৯ সন। স্বাগতম বাংলা নববর্ষ, শুভ বাংলা নববর্ষ। নতুন বাংলা বছর অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে বাঙালির জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক— এই কামনায় দৈনিক মানবাধিকার সংবাদ নিউজপেপারের সকল পাঠক, সমালোচক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সর্বোপরি দেশবাসীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা।
ছয় শতাধিক বছর আগে বাংলা বছর চালুর পর থেকেই পহেলা বৈশাখ পালন বাঙালির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। মুঘল সম্রাট আকবর তৎকালীন সুবে বাংলা থেকে জমির খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সন চালু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ আরো একটি বাংলা নতুন বর্ষে পদার্পন করলাম আমরা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় বিগত দুই বছর যাবত বাঙালির শত শত বছরের পুরনো এই বাংলা নববর্ষ ঘরের বাইরে উদযাপন করা হয়নি। এ বছর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই দিনটি উদযাপনে বাড়তি আকর্ষণ ও উত্তেজনা থাকবে সবার মাঝে। ঐতিহ্যবাহী নানা অনুষ্ঠান আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল দেশব্যাপী পালিত হবে বাংলা বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের বৈশাখের আগমনী রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ দিয়ে দিনব্যাপী উৎসবের শুরু হবে।
সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তিপূর্ণ নতুন বাংলা বছরের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এদিন নানা ঐতিহ্যবাহী উৎসব আর আনন্দে মেতে উঠবেন। দুই বছর পর বর্ণিল উৎসবে মাতবে গোটা দেশ। রাজধানী ও সারাদেশ জুড়ে থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ছায়ানট। সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমির উদ্যোগে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়। এ উপলক্ষে দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী র্যা লির আয়োজন করা হয়েছে। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের এই দিনে নানা অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি স্যাটেলাইন চ্যানেলসমূহ বাংলা নববর্ষের ওপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটির দিন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা দেশবাসীসহ সারাবিশ্বের বাংলাভাষীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বছরের এ দিনে দেশের ব্যবসায়ীরা নতুন হালখাতা খোলেন এবং গ্রাহক ও অতিথিদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়িত করে থাকেন।
দেশের সর্ববৃহৎ এ সাংস্কৃতিক উৎসবের দিনে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ লাল-সাদা পোশাক পরে রাস্তায় নেমে আসেন। বাঙালির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি অনুসারে দেশবাসী এ দিনে বাড়ি, রেস্টুরেন্ট বা মেলায় ইলিশ, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে পান্তাভাত খান।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে নির্বিঘ্নে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে লক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বছর পহেলা বৈশাখ এসেছে পবিত্র রমজান মাসে। তাই নানা অনুষ্ঠানের মাঝে রমজানের পবিত্রতা যাতে বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রমজানের কারণে দুপুর ২টার মধ্যে পহেলা বৈশাখের কর্মসূচি শেষ করতে হবে।