জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেটের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন দেশের ২০ জন মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। গতকাল সকালে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই মতবিনিময় হয়। পরে মিশেল ব্যাচলেট ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকালে চলে যান কক্সবাজারে।
মঙ্গলবার (১৬ই আগষ্ট) তিনি সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি পক্ষগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। মিশেল ব্যাচলেটের সঙ্গে বৈঠকের পর মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, হাইকমিশনার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ব্যাচলেটের কাছে যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম, বাকস্বাধীনতা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, নারী নির্যাতন প্রভৃতি। মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের কাজের সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও ব্যাচলেটের কাছে তুলে ধরেন।
বৈঠকের পর আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এখানে যারা আমরা বাংলাদেশি মানবাধিকার বা আইন সহায়তা নিয়ে কাজ করছি, আমাদের কথাগুলো তুলে ধরেছি। মানবাধিকারকর্মী খুশি কবীর বলেন, মানবাধিকারের অবস্থাটা কী, যেরকম আমাদের অনেকে, সারাসহ অনেকেই ভালো দিকগুলো যেমন বলেছে, আমাদের এখানে কোথায় দুর্বলতা আছে, কোথায় ঠিক করতে হবে এই জিনিসগুলো খুব স্পষ্টভাবে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একজন তাঁর ভাই হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি তাঁর ভাইকে খুঁজে পাচ্ছেন না।
আদিবাসীরা তাঁদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন। প্রতিবন্ধীরা তাঁদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। নারী নির্যাতন নিয়েও কথা হয়েছে। মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে।এর প্রতিকার আসলে কোথায় পাওয়া যাবে? এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে? এই বিষয়গুলো ব্যাচলেটের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
এসব শুনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার কী বলেছেন, জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিনি বলেছেন, তাঁর কাছে কোনো মিরাকল নেই। এগুলো নিয়ে একটা প্রসেস ওরিয়েন্টেড ডিসকাশনে যাওয়া যায়। একটা নির্বাচন হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। সিস্টেম ঠিক না থাকলে নির্বাচন হলেও মানুষ গণতন্ত্র পাবে না। বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। ডায়ালগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
গুম নিয়ে কাজ করা ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, আমরা জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো ব্যাচলেটের সামনে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, এই সরকারের আমলে ছয় শর বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন।
মিশেল ব্যাচলেট চার দিনের সফরে গত রবিবার ঢাকায় আসেন। এদিন তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
There’s no humanitarian in Bangladesh. How does minority tortured by the Terrorist, fundamentalist and Extremist ? The Government is not sincere to protect the Minority.