স্বাধীনতার ৫১ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি ঐতিহাসিক কপিলমুনি যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা তালার মো: আব্দুস শুকুর মোড়ল। ২০১০ সালে জামুকা আবেদনের পর ২০১৬ আবেদনে যাচাই-বাছাইয়ে ৪২ জনের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত থাকলেও সর্বশেষ ২৫ ফেব্রæয়ারী ২২’ আবেদনে যাচাই-বাছাইয়ে তালিকাভূক্ত হয়নি মহান মুক্তিযুদ্ধের এ বীর সেনানীর।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মৃত হাজী আবুল কাশেম মোড়লের ছেলে মো: আব্দুস শুকুর মোড়ল কপিলমুনি যুদ্ধেও অন্যতম মহানায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আব্দুস সালামের ছোট ভাই। ৩ ভাইয়ের মধ্যে শুকুর মোড়ল মেঝ। ১৯৭০ সালে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির থেকে এস,এস,সি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশ মাতৃকার মুক্তির আন্দোলনে বড় ভাই মোড়ল আব্দুস সালামের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনিও ঝাপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে এইচ,এসসি পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগে ভর্তি হলেও নানা প্রতিকূলতায় শেষ করতে পারেননি।
মোড়ল আব্দুস শুকুর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ভারতের বশিরহাটের টাকিপুর ক্যাম্প থেকে ট্রেনিং শেষে ১৫ আগস্ট বড় ভাইয়ের সাথে বাংলাদেশে ফিরে যুদ্ধে যোগ দেন।যুদ্ধকালীণ শেষের দিকে মুক্ত হওয়া খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ঐতিহাসিক কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্প পতনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অন্যান্যদের সাথে অংশ নেন আব্দুস শুকুর। বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আব্দুস সালামের কপিলমুনির মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা গ্রন্থে শুকুরের সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের কথা উল্লেখ রয়েছে।
মো: আব্দুস শুকুর মোড়ল বলেন, যুদ্ধ শেষে ভাল চাকুরীর সুযোগ ও পরিবারের চাপ থাকলেও তিনি তা করেননি। বরং ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের হাত ধরে দেশ পুণর্গঠনে নিজেকে সপে দেন দেশমাতৃকায়।যুদ্ধপরবর্তী ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানি তাকে মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যায়নপত্র যার নং-২৩৬৩৫১ প্রদান করলেও গেজেটভুক্ত হননি। বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম মোড়লকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্তির ব্যাপারে তাগিদ দিলে তার সাফ কথা, তালিকাভূক্তির জন্য যুদ্ধ করিনি। এরপর ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা তালিভূক্তির জন্য আবেদন করেন কপিলমুনি যুদ্ধের মুল পরিকল্পনাকারী ও সর্বাধিনায়ক মোড়ল আব্দুস সালাম। সে তালিকায় মোড়ল আব্দুস শুকুরের নাম থাকলেও গেজেটে নাম বাদ পড়ে তার।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত তাকে ২৯/১১/১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ডার মো: মতিউর রহমান, ২০/০৭/২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তালা উপজেলা কমান্ডার জি,এ,সবুর, ৩০/০৯/২০০৩ সালে তালা উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার মো: নূরুল মোল্লা, একই দিন জালালপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: আবুল খায়ের, ২/১১/২০০৭ সালে যুদ্ধকালীণ সাতক্ষীরা মহকুমার মুজিব বাহিনীর প্রধান আলহাজ্জ্ব ইঞ্জি: শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১০ সালে মুজিববাহিনীর বৃহত্তর খুলনার কমান্ডার শেখ কামরুজ্জামান টুকু (বিএলএফ)ও একই বছপা মুজিব বাহিনীর বৃহত্তর খুলনার ডেপুটি কমান্ডার মো: ইউনিুচ আলী ইনু (বিএলএফ), ৫/১২/২০১০ সালে গাজী মো: রহমতুল্লাহ দাদু (বীর প্রতীক) মো: আব্দুস শুকুর মোড়লকে মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যায়নপত্র প্রদান করেন।
সর্বশেষ অনলাইন আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাইতে গত(২৪ অক্টোবার ২২) ১১ জনকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত ও দ্বিধাবিভক্ত তালিকায় ১৬ জনের নাম থাকলেও ওঠেনি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আব্দুস শুকুরের নামটি। ঘটনায় জীবনের পড়ন্তবেলায় খানিকটা মূষঢ়ে পড়েছেন তিনি। তবে, মনের জোর শক্ত। তার বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধর স্বপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীণ যেকোন সময় গেজেটভূক্ত হবেন তিনি। এমন প্রত্যাশায় এখনো প্রত্যায়নের ফাইল হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দ্বারে দ্বারে।
এদিকে সর্বশেষ তালিকায় নাম না থাকায় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে স্বভাবসূলভ হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে উত্তর, বদনসিব। ৭১’র রণাঙ্গনে অস্ত্রহাতে শত্রæপক্ষ দমনে দাপিয়ে বেড়ানো শুকুরের হাতে শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণের ফাইল। এখনো ছুটে বেড়ান তবে অস্ত্র নয়,ফাইল হাতে। কারা ছিলেন যাচাই-বাছাই কমিটির নির্বাচক? কেনই বা তালিকায় তাকে স্পর্শ করা গেলোনা? আর কেনইবা অমুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিধাবিভক্ত তালিকায় স্থান হলো? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর হয়তো জানা নেই শুকুরসহ অনেকের।