সাতক্ষীরার তালার সুড়িখালি বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজ স্বার্থে বন্ধ রাখায় প্রায় ৬শ’ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় গত প্রায় ১৫দিন জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে সুড়িখালি বিল। এতে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র কৃষকসহ জমি মালিকরা।জলাবদ্ধতার কারন ধ্বসে পড়েছে কাঁচা ঘর বাড়ি, একইসাথে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ধানচাষের লক্ষমাত্রা ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তালার খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা মৌজার বিশাল এলাকা জুড়ে সুড়িখালি বিল। এ বিলে প্রায় দুইশত কৃষকের ৬শ বিঘার মতো কৃষি জমি রয়েছে। বেশিরভাগ জমিতে আমন এবং বোরো চাষ হয়। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে ধানের আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। বিলটি খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা গ্রাম থেকে পশ্চিমে দরমুড়াগাছা পর্যন্ত এবং দক্ষিণে মুড়াগাছা থেকে উত্তরে শালিখা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুড়িখালি বিলের সামান্য অংশে মাছের ঘের। বেশিরভাগ জমিতে ধান চাষ করা হয়। সম্প্রতিকালের অতি বৃষ্টিতে বিলটি সম্পূর্ণ ডুবে আছে। এই ঘটনার নেপথ্যে- সরকারি বন্দোবস্ত পাওয়া খাস জমি অবৈধভাবে বিক্রি করার পর প্রভাবশালীরা ওই জমির উপর বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়াকে দায়ী করছে ভুক্তভোগী চাষীরা।
এবিষয়ে স্থানীয় আছাফুর সরদার, সুমন সরদার, শহিদুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ সেন, মতিয়ার সরদার, পলাশ সরদার, জহুরুল শেখসহ একাধিক কৃষক জানান, বিলের ৩০৫১ দাগের ৬৬ শতক জমি বিগত ১৯৮৮-৮৯ সনে সরকার মুড়াগাছা গ্রামের ভুমিহীন গোসাই অধিকারীকে বন্দোবস্ত দেয়। উক্ত গোসাই অধিকারীর পুত্র কার্তিক অধিকারী বিগত ১০বছর পূর্বে মুড়াগাছা গ্রামের মৃত সৈয়দ নুরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ সেকান্দারের কাছে সরকারি বন্দোবস্তের নিয়ম লংঘন করে বিক্রয় করেন। পরে সৈয়দ সেকান্দার ওই ক্রয়কৃত জমিতে বাঁধ দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশনে বাঁধার সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে সুড়িখালি বিলসংলগ্ন পিচরাস্তার উত্তর পার্শে ২৬২০ দাগের সরকারি বন্দোবস্তকৃত ৯৯শতক জমিতে মৎস্যচাষ করে মুড়াগাছা গ্রামের মৃত বারিক সরদারের ছেলে তৈয়ব সরদার। সরকার তাকে ৯৯শতক জমি বন্দোবস্ত দিলেও তিনি ওখানে শালিখা নদী সংযোগ খালের ৫০শতকসহ প্রায় ১৪৯শতক জমি আয়ত্তাধীন রেখে মৎস্য চাষ করেন। ফলের বিলের ওই অংশ দিয়ে শালিখা নদীতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকায় সুড়িখালি বিল জলাবদ্ধ হচ্ছে ।এবং ইতিমধ্যে বিল সংলগ্ন দক্ষিণ প্রান্তের অন্তত ১শ কাঁচাবাড়ি ধ্বসে পড়েছে।
এবিষয়ে বিলের জমি-জোতদারগন তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করলে তিনি সংশ্লিষ্ট খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে পানি অপসারণের জন্য পাইপ স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন।জমি-জোতদারগন পাইপ স্থাপন করতে গেলে সৈয়দ সেকান্দার গং সেই পাইপগুলো স্থাপনে বাধা প্রদান করে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান উক্ত স্থানে উপস্থিত হয়ে আগামী শনিবার পাইপ স্থাপনের জন্য সময় চেয়ে নেন।
খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা গ্রামের কৃষক মিরাজ সরদার জানান, বিলে তাদের ৫ বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে কোন কিছুই চাষাবাদ করা যায় না। আবার বৃষ্টি হলে অনেক সময় ধান ঘরে তুলতে পারেন না, জমিতেই নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় ধান ঘরে তুলতে পারলেও পানিতে নষ্ট হওয়ায় ফলন কম হয়।
সুড়িখালি বিল কেন্দ্রীক কৃষকনুর মোহাম্মদ সরদার, আলাউদ্দিন সরদার, নাসির সরদার, উজ্জ্বল অধিকারী ও খোরশেদ সরদারসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিলে আমন ধান আবাদের আগমূহূর্তে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আমনচাষ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে বহু জায়গায় ধর্না দিলেও সংশ্লিষ্ট কেউ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
এবিষয়ে খেশরা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ ওয়াদুদ জানান- সুড়িখালি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পুরাতন খালটি পুনঃ খনন করা প্রয়োজন, যেটা শালিখা নদীতে গিয়ে পড়বে। তাহলে বিলসহ পুরো এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।’
খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি আগামী মঙ্গলবার তার অফিসে বসে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ‘
এ বিষয়ে তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর কৃষকদের দাবির সাথে একমত পোষন করে বলেন ,সুড়িখালি বিলটি দুই ফসলি। তাও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে। বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে পারলে বোরো ও আমন দুই মৌসুমেই যথাযথ আবাদ করা সম্ভব হবে।’