অবশেষে তালা সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ তাদের পরিক্ষা রিপোর্ট ভুল স্বীকার করে রোগীর পরিবারকে মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে আপোষ মিমাংশা করে নিয়েছেন। অন্যদিকে অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার পরিবর্তে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় খুলনা থেকে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে ঘটনার শিকার স্কুলছাত্রী রেশমিকে।
সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নির্দিষ্ট স্নোলোজিষ্ট না রেখে এর সত্ত্বাধিকারী কথিত ডাক্তার বিধান রায় নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেন। এমনকি পরীক্ষা রিপোর্টের শেষে তিনি নিজেই পরীক্ষক হিসেবে স্বাক্ষর করেন। যেখানে তিনি নিজেকে (ডিএমএফ/সিএমইউ) পরিচয় দেন।
সূত্র জানায়, এমবিবিএস ডাক্তার (স্নোলোজিষ্ট) ছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রামের নিয়ম না থাকলেও তিনি দীর্ঘ দিন ধরে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে থাকেন। বিভিন্ন সময় তার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালেখি হলেও এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এরই মধ্যে সর্বশেষ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের সিলেমানপুর গ্রামের মৃত ফরিদ সানার নবম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে রেশমি খাতুন (১৫) অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত ১৬ আগস্ট তাকে ঐ ক্লিনিকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। যার রিপোর্টে (এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্প) ধরা পড়ে।
ঘটনার শিকার রেশমির হতদরিদ্র বিধাব মা আকলিমা বেগম জানান, রিপোর্ট অনুযায়ী মেয়েকে নিয়ে প্রথমে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সেখান থেকে ৩ দিন পরে ১৯ আগস্ট স্থানীয় পাইকগাছা রাসেল ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে ঐ দিনই ডাক্তার বরকত আলী তার এ্যাপেন্ডিস অপারেশন করতে গেলেই বাধে বিপত্তি। সিজারের পর তিনি এ্যাপেন্ডিস নয়, তার খাদ্যনালীতে টিউমার দেখতে পেয়ে রোগীর অভিভাবক তার মাকে জানান। এরপর তিনি অপারেশন না করেই পুনরায় সেলাই করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এরপর অর্থাভাবে তাকে ঢাকায় না নিয়ে খুলনার একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখান থেকে ব্যাস্থাপত্রসহ রেশমিকে ফের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে ব্যাস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা করানো হচ্ছে। বর্তমানে তার অবস্থা আরো গুরুতর।
এদিকে তালা সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে রেশমির ভূল চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হলে ক্লিনিক মালিক বিধান চন্দ্র রায় রেশমির পরিবারের সাথে বিষয়টি মিমাংশা করে নিতে বিভিন্ন স্থানে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত ২৯ আগস্ট স্থানীয়দের মাধ্যম ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে আপোষনামা লেখাপড়ার মাধ্যমে নিজেদের ভুল স্বীকার করে রেশমির ক্ষতিপূরণ বাবদ মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টির রফা করা হয়েছে।
এব্যাপারে ক্লিনিক মালিক তালার মেলা বজারের মৃত নগেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে বিধান চন্দ্র রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি রিপোর্ট সঠিক ছিল বলে জানান। এমনকি স্নোলোজিষ্ট হিসেবে তার স্বাক্ষরের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি সিএমইউ ট্রেনিং নিয়েছেন বলে জানান। এছাড়া সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এমবিবিএস ডাক্তার স্নোলোজিষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করানোর কথা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক জরুরী ভিত্তিতে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসী জেলা সিভিল সার্জনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।