1. admin@dainikmanobadhikarsangbad.com : admin :
পশ্চিম সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে মানুষ ছিনিয়ে আনেন টাইগার গনি - দৈনিক মানবাধিকার সংবাদ
২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| গ্রীষ্মকাল| শুক্রবার| রাত ১০:৫৮|

পশ্চিম সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে মানুষ ছিনিয়ে আনেন টাইগার গনি

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : রবিবার, জানুয়ারি ৯, ২০২২,
  • 504 Time View

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের কালিঞ্চি গ্রামে বাস করেন আব্দুল গনি গাজী।

বয়স ৪০ পেরিয়েছে। পেশায় তিনি বনজীবী। বর্তমানে সবাই তাকে টাইগার গনি নামে চেনেন। জীবিকার তাগীদে সুন্দরবনে যাওয়া জেলে বাওয়ালিদের কেউ বাঘের আক্রমণে আহত ও নিহত হলে তাদেরকে উদ্ধার করে আনেন টাইগার গনি। এজন্যই আব্দুল গনি গাজী এখন ‘টাইগার গনি’ নামে পরিচিত। তবে এই কাজের জন্য কোন পারিশ্রমিক নেন না টাইগার গনি। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন তিনি। ২০০৭ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ওয়াইল্ডটিমের ফরেস্ট টাইগার রেসপন্স টিমে চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন আব্দুল গনি। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাঘের মুখ থেকে অর্ধশতাধিক মানুষকে ফিরিয়ে এনেছেন এই গনি গাজী।

টাইগার গনি বলেন, ছোট বেলা থেকে বাবার সঙ্গে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরতে যেতাম। ২০০৭ সালে বন বিভাগকে সহযোগিতা করতে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক গঠিত ওয়াইল্ড টিমে আমার কাজ করার সুযোগ হয়। ওই সময় আমার এলাকায় একজন মৌয়াল বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়। আমি সেই মরাদেহটি উদ্ধার করতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের সহযোগিতা করি। পরবর্তীতে ফরেস্ট টাইগার রেসপন্স টিমের টিম লিডারের দায়িত্ব পাই। এরপর টানা ১২ বছর ওয়াইল্ড টিমের সঙ্গে থেকে সুন্দরবনের কেউ বাঘের আক্রমনের শিকার হলে আমি তাদের উদ্ধার করে আনি। এই দীর্ঘ সময়ে আমি ৭০টির বেশি মৃতদেহ বাঘের কাছ থেকে উদ্ধার করে এনেছি। এছাড়া কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করে তাদের কাছে পৌছায়ে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। টাইগার গনি বলেন, ২০১৯ সালে ওয়াইল্ড টিমের ফরেস্ট রেসপন্স টিমের প্রোজেক্টের মেয়াদ শেষ হলেও আমার কাজ অব্যাহত রয়েছে। যখনই খবর শুনি কোন মানুষকে বাঘে ধরেছে, আমি সঙ্গে সঙ্গে বনে ছুটে যাই। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর ২০২১, দিনটি ছিল মঙ্গলবার। বাঘের আক্রমনে নিহত হন বনজীবী মুজিবুর রহমান। আমি তার মরাদেহটি উদ্ধার করে এনেছি। তিনি আরও বলেন, সোমবার বিকালে মুজিবুর রহমানকে সুন্দরবনের পায়রাটুনির খাল থেকে বাঘে ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রেসকিউ টিমের সঙ্গে আমিও সুন্দরবনে যাই। ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পর বাঘের পায়ের ছাপ ও রক্তের দাগ দেখে বনের গভীর থেকে মুজিবুর রহমানের মরাদেহটি উদ্ধার করে আনি। এই অল্প সময়ে বাঘটি মৃত দেহটির একটি পা পুরাটাই খেয়ে ফেলে। মৃতদেহটি উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পারাটাই আমার তৃপ্তি। আব্দুল গনি গাজী বলেন, আমার মা বাবা মারা গিয়েছেন।

পরিবারে আমিসহ স্ত্রী, এক ছেলে ও মানসিক ভারসাম্যহীন এক বোন রয়েছেন। একটি মেয়ে তাকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে গতবার এইচএসসি পাশ করেছে। চাকরি পাওয়ার পর সুন্দরবনে মাঝে মাঝে মাছ ধরতে যেতাম। ছোট একটা ব্যবস্যাও শুরু করছিলাম। তবে লোকসানে পড়ে বর্তমানে এখন বেকার রয়েছি। যদি কোন সংস্থায় কাজের কোন সুযোগ পাই-সেই অপেক্ষায় আছি। তবে বাঘ নিয়ে সুন্দরবনে কোন প্রজেক্ট চলছে না।

এই বিষয়ে সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটি সাতক্ষীরার আহবাহক গাজী সালাউদ্দিন বাপ্পি বলেন, গনি খুব ভালো মানুষ। সুন্দরবনে কাউকে বাঘে ধরেছে শুনলেই স্বেচ্ছায় উদ্ধার কাজে অংশ নেন তিনি। স্থানীয়রা তাকে এই সাহসী কাজের জন্য শ্রদ্ধা করেন। চাকরি না থাকায় বর্তমানে অর্থ কষ্টে দিন যাপন করছেন তিনি। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসেন তিনি। সরকারিভাবে এই সাহসী মানুষটিকে সম্মানীত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি। কথা হয় পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষণ এসিএফ এমএ হাসানের সাথে। তিনি বলেন, টাইগার গনি এক সময় একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ওয়াইল্ড টিমের সঙ্গে কাজ করতেন। তখন থেকে কেউ বাঘের আক্রমণের শিকার হলে তাকে উদ্ধার করতেন গনি। সে সময় ওয়াইল্ড টিম ও বন বিভাগ থেকে তাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিলো।

বর্তমানে আমাদের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। তবে কয়েক দিন আগে বাঘের আক্রমণে নিহত মুজিবুরকে উদ্ধার অভিযানে রেসকিউটিমের সঙ্গে আব্দুল গনি স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন। সুন্দরবনে বর্তমানে ওয়াইল্ড টিমের কোন কার্যক্রম নেই। তবে ভবিষ্যতে কোন সুযোগ হলে টাইগার গনির জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। © প্রকাশক কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত -২০২২

You cannot copy content of this page