প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে জনগণের সেবক হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, পুলিশকে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ মানুষের আস্থা অর্জন করবে এটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী আজ গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি মুজিববর্ষে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি মানবিক উদ্যোগ দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক এবং গৃহহীনদের জন্য নির্মিত গৃহ হস্তান্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে এ আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম রাজারবাগ প্রান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বক্তব্য রাখেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনস প্রান্ত থেকে যুক্ত হয়ে রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, র়ংপুরের পীরগঞ্জ থানা থেকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, মাগুরা সদর থানা থেকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খঃ মুহিদ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। সার্ভিস ডেস্কে কর্মরত নারী পুলিশ সদস্যগণ এবং সার্ভিস ডেস্ক থেকে সেবা পাওয়া সুবিধাভোগী এবং গৃহ পাওয়া উপকারভোগীরা বক্তব্য রাখেন। অতিরিক্ত আইজি ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের সকল থানা ও পুলিশ লাইন্স প্রান্ত ওয়ানওয়ে সংযুক্ত থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক হবে, পুলিশের কাছে গেলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে এ আত্মবিশ্বাস মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। তিনি থানায় সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন শুরু করেছি। সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায় সে লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য ছিল, যে কাজ জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন আমরা আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। এর সুফল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর করে দেয়ার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জনগণের পুলিশ। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশেই থাকবেন এটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি সততার সঙ্গে কাজ করে যেতে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হেল্প ডেস্কে যারা কাজ করবেন তাদেরকে প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যে বাহিনী জনগণের বাহিনী তাকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক চালুর মাধ্যমে দেশের জনগণের কল্যাণে আরও একটি মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে সার্ভিস ডেস্ক স্থাপনের কাজ সুসম্পন্ন করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫১৯টি থানায় ৫২০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আজ প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০০ গৃহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
মোঃ আখতার হোসেন বলেন, দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন এবং গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ বাংলাদেশ পুলিশের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু গণমানুষের নেতা ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে পুলিশের এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে এক বিস্ময়, উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। তিনি বলেন, পুলিশ দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য অবদান রাখছে। করোনাকালে পুলিশের ভূমিকা বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল আত্মপ্রত্যয়ী এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, যিনি নিজ কর্মের উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে সারাবিশ্বে এক অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। গণমানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন ইস্পাত কঠিন, অকুতোভয় এক সংশপ্তক। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এক মহান রাষ্ট্রনায়ক; মুক্তি ও মানবতার এক প্রোজ্জ্বল বাতিঘর।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই। সেই বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো’। বঙ্গবন্ধুর এ দর্শন ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি থানায় স্থাপন করেছে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় দেশে প্রণীত সকল আইন ও নীতিমালার আলোকে মুজিববর্ষের সূচনালগ্ন ২০২০ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ ডেস্কের কার্যক্রম শুরু করা হ