জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজার থেকে আটক হয়েছেন সাতক্ষীরার তালার একই পরিবারের তিনজন। তারা হলেন, উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা গ্রামের মৃত ওমর আলী মোড়লের ছেলে শরীফুল ইসলাম মোড়ল (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৩৮)ও একমাত্র মেয়ে হাবিবা (২০)।
গত ২৫ জুলাই বাড়ি থেকে শরিফুল তার স্ত্রী ও মেয়ে এক সঙ্গে বের হন। তারপর থেকেই ভাইসহ পরিচিতজনদের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজার থেকে আটক হন ঐ তিনজন।
সরেজমিনে তালার খলিলগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে শরিফুলের ছোট্ট একটি দোকান ঘর। স্থানীয়রা জানান,এই দোকানটিতে পরিবার নিয়ে বসবাসসহ সাইকেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালাতো শরিফুল।পাশেই মোড়ল পাড়া সেখানেই শরিফুলের পৈতিক ভিটা। শরিফুলের দুই ভাই সেখানেই বসবাস করেন। তারা জানান, গত ২৫ জুলাই স্ত্রী আমেনা বেগম ও মেয়ে হাবিবাকে নিয়ে জঙ্গী হিসাবে আটক জামাইকে জামিনে মুক্তো করতে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান শরিফুল। তরপর থেকেই মোবাইল বন্ধ থাকায় শরিফুলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নি তারা।
শরিফুলের বড় ভাই নজরুল মোড়ল এপ্রতিনিধিকে জানান, তারা খুবই গরীব ও নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। তার ছোট ভাই শরিফুল সাইকেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালায়।কখনো খারাপ কোন কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল এমন কোন খবর তিনি কেন, এলাকার কোন মানুষ দিতে পারবে না।আপনারাই খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন। একই কথা পরিবারটির বাকি সদস্যদের।
কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আটরশি পীররের ভক্ত শরিফুল।প্রতি বছর আটরশির ওরশ শরীফে যেতো।তার সাথে স্থানীয়,এলাকাবাসীসহ মাঝে মধ্যে তিনিও যেতেন। তবে এটা কোন রাজনৈতিক দল কিনা সেটার তার জানা নেই।তার ছোট ভাই জঙ্গি সদস্য হয়েছে শুনে অবাক হচ্ছেন। এটা তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না।পরিবারের বাকি সদস্যরাও হতভম্ব হয়ে পড়েছেন জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর শুনে।
তিনি আরো জানান, দুই বছর আগে জঙ্গি সন্দেহে সিরাজগঞ্জ থেকে আটক হন শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই অমিনুল ইসলাম শান্ত। বর্তমানে সে সিরাজগঞ্জ কারাগারে। তাকে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করতে সিরাজগঞ্জে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বের হন শরিফুল। গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজার থেকে আটক হন তারা।
শরিফুলের প্রতিবেশী খলিলনগর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য ময়না বিবি বলেন, টিভি খবরের মাধ্যমে তাদের আটকের খবরে শুনে রীতিমত হতবাক হয়েছেন তিনি। শরিফুল খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে। রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর বেঁধে স্ত্রী-সন্তানসহ সেখানেই বসবাস করেন এবং সাইকেল সারাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বলেও জানান তিনি।শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই গত বছর জঙ্গী হিসাবে ধরা পড়লে ঐ পরিবারে মূলত অন্ধকার নেমে আসে। তিনিসহ এলাকার সবাই জানে জামাইকে জামিনে মুক্ত করতে ১৫/১৬ দিন আগে একটি গরু বিক্রি ও জমির হারির প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেনি।
সর্বশেষ গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের অভিযানে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দূর্গম পাহাড়ী এলাকার জঙ্গী আস্তানা থেকে তাদের আটকের খবরে রীতিমত হতবাক হয়েছেন তিনিসহ এলাকাবাসী।
এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ থেকে জঙ্গী হিসেবে আটক হয়েছিল শরিফুলের মেয়ের জামাই আমিনুল ইসলাম শান্ত।বর্তমানে তার জামাই এখন কারাগারে আছে।
তালা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরী রেজাউল ইসলাম জানান, এবিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য নয়,তবে খবর পেয়ে তথ্যানুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ। আটককৃতদের বিষয়ে ব্যাপক খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।