ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী ভোক্তার প্রতি সহজ-এর অবহেলা পাওয়া গেছে। সহজের এই অবহেলা প্রমাণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকার ২৫ শতাংশ অর্থ দেয়া হবে অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনিকে। তিনি পাবেন ৫০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিট বিক্রির অংশীদার প্রতিষ্ঠান ‘সহজ’-এর বিরুদ্ধে গ্রাহক অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রেলের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ছয় দফা দাবিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টানা ১২ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরে প্রতিকার চেয়ে সহজ ডটকম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শুনানি শেষে সহজকে জরিমানা করা হয়।
পরে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী ভোক্তার প্রতি সহজ-এর অবহেলা পাওয়া গেছে। সহজের এই অবহেলা প্রমাণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
আইন অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ দেয়া হবে অভিযোগকারী রনিকে। অর্থাৎ তিনি পাবেন ৫০ হাজার টাকা।
সফিকুজ্জামান বলেন, ‘সহজ যে সিস্টেমে অপারেট করে সেটা কতটা ভোক্তাবান্ধব, এক্সপার্টদের দিয়ে তা মূল্যায়ন করা হবে।
‘যে ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করার কথা তা পুরোপুরি অনলাইনে বিক্রি হয় কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
গত জুনে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ৭ জুলাই থেকে তিনি ছয়টি দাবিতে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান শুরু করেন।
ঢাবি শিক্ষার্থীর আন্দোলনের কারণ এবং এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করণীয় কী তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই কারণ জানতে চেয়েছে।
সকালে আদালতের কাজ শুরু হলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনি কি ডেইলি স্টার পত্রিকা পড়েছেন? তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, পড়েছি।
তখন আদালত বলে, ‘তিন নম্বর পেজ দেখেছেন?’
আইনজীবী বলেন, ‘দেখেছি।’
তখন আদালত বলে, ‘তিনি (রনি) হাতকড়া অবস্থায় দুর্নীতি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, এটা দুদক জানে কি না? জানলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না- এটা জানান।’
আদালত বলে, ‘তার হাতকড়া অবস্থায় ওখানে আন্দোলন করার দরকার কী, তিনি যদি সংক্ষুব্ধ হন, প্রয়োজনে তিনি হাইকোর্টে আসুক। হাইকোর্ট অবশ্যই বিষয়টি দেখবে।’
কী ছিল রনির অভিযোগ::
মহিউদ্দিন রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত এপ্রিলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন।
রনি নিউজবাংলাকে জানান, গত ১৩ জুন রেলের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা সংস্থা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে আমার পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়।
টাকা কেটে নিলেও তিনি কোনো আসন পাননি। এমনকি টাকা নেয়ার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্টও তারা দেয়নি।
সেদিন তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফেইল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়।
রনির অভিযোগ, ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন।
রনির কী কী দাবি:
রনির দাবিগুলো হলো- অনলাইনে টিকিট কেনায় সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানি বন্ধ করে তদন্ত করে এ হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিতে হবে; টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে; অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে; ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে; ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে; শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
রেলের টিকিটকে কঠিন করেছে সহজ
প্রায় দুই বছর আগে রেলের আহ্বান করা দরপত্রে সিএনএসের পরিবর্তে টিকিট ব্যবস্থাপনার জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয় সহজ লিমিটেড। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রেলভবনে আনুষ্ঠানিক সহজ ও রেলের চুক্তি হয়। আগামী পাঁচ বছরের জন্য ট্রেনের টিকিট বিক্রি করবে সহজ।
সিএনএস বিডির বিরুদ্ধে রেলের টিকিটি বিক্রি নিয়ে নানা অনিয়ম ছিল। তবে সহজের রেলে যুক্ত হওয়া নিয়েই উঠে অনিয়মের অভিযোগ। আর শুরুতেই গোলপাল পাকিয়ে ফেলা সহজ কর্মীদের বিরুদ্ধেই কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় নিজেদের এক কর্মীকেই চাকরিচ্যুত করেছে সংস্থাটি।
শুরু থেকেই অনলাইনে মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য সার্ভারে ঢুকতে পারছিল না। পরে অবশ্য এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে নানা ভোগান্তি রয়েই গেছে, যার একটির শিকার হন রনি।