মোংলা সমুদ্র বন্দরের জেটি এলাকার ইয়ার্ড ও শেডে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৩২টি রিকন্ডিশন গাড়ি নিলামে তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
করোনার প্রভাবের কারনে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো গাড়ি খালাস করে না নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ২ হাজার ৮শ’ ৮৪টি গাড়ি বন্দরের ইয়ার্ড ও শেডে পড়েছিল। বন্দরে গাড়ি রাখার জায়গা খালি ও শুল্ক জটিলতা দূর করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষে মঙ্গলবার মোংলা কাস্টমস হাউজ এ নিলাম কার্যক্রম আয়োজন করে।
মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস করে তা জেটির ইয়ার্ড ও শেডে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। যা বিভিন্ন সময় এ বন্দরের জেটি থেকে খালাস করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিয়ে যায়। কিন্তু আমদানি করা এসব গাড়িগুলো কোম্পানিরা ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর জেটি থেকে ছাড় করানোর নিয়ম থাকলেও আমদানিকারকরা তা করেননি প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছরেরও অধিক সময় ধরে গাড়ি না নেয়ার ফলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিয়মানুযায়ী মঙ্গলবার গাড়িগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তুলছে। মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘদিন এ নিলাম প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ২ হাজার ৮শ’ ৮৪টি গাড়ি শুল্ক জটিলতার কারনে নিলামের অপেক্ষায় বন্দরের ইয়ার্ড ও শেডে পরে ছিল। যার কারনে নতুন আমদানি করা গাড়ি রাখার জন্য জায়গা জটিলতায় বন্দরের জেটিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। শুল্ক ও আইনী জটিলতা শেষে ২ হাজার ৮৮৪টি গাড়ি থেকে ১৩২টি গাড়ি নিলামের জন্য গত ৭ জানুয়ারি দরপত্র আহŸান করে মোংলা কাস্টমস হাউজ। এর গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে হাইয়েস, নোহা, প্রাডো, নিশান পেট্রোল, জাম ট্রাকসহ অন্যান্য দামী ব্রান্ডের ১৩২টি গাড়ি। গাড়ি নিলামের মোট ১৩৭টি লটের অনুকুলে ৪০টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে যা ১৬ জানুয়ারি জমা দেয়া হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সিডিউল বক্সে।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নিলামে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে ১৩২টি বিলাশবহুল গাড়ি নিলামের সিডিউল উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন সবোঁচ্চ দরদাতাকে তাদের নিলামে ক্রয় করা গাড়ি পরবর্তীতে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানান কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তারা মোঃ আবু বাসার সিদ্দিক।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, দীর্ঘদিন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরে আমদানিকৃত গাড়ি খালাস ও নিলাম না হওয়ায় জেটি এলাকায় গাড়ির জট বা পণ্য রাখার সমস্যা তৈরি হয়। তবে নিলাম প্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্য রাখতে ব্যবসায়ীদের সুবিধাও হবে অন্যদিকে সঠিক সময় সরকারের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালের ৩ জুন ২৫৫টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির মধ্য দিয়ে এ বন্দরে গাড়ির কার্যক্রম শুরু হয়। হক্স-বে অটোমোবাইল কোম্পানি প্রথম এই মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি করেন। সেই থেকে এই চলতি মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৪৬ হাজার ১শ’ ৬৩টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে এই বন্দরে তা খালাস করে রাখা হয়েছে। আমদানি করা এসকল গাড়ির মধ্য থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৭৯টি গাড়ি কোম্পানি নিজস্ব ভাবে বিক্রি ও শুল্ক জটিলতার কারনে বিভিন্ন সময় নিলামের মধ্য দিয়ে খালাস করা হয়েছে। আর বর্তমানে কাগজপত্র ও শুল্ক জটিলতার ও রাজস্ব সমস্যার কারনে বন্দর জেটির ইয়ার্ড ও শেডে ২ হাজার ৮শ’ ৮৪টি গাড়ি রয়েছে, যা পর্যাক্রমে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে বলেও জানান তিনি।
মোংলা কাস্টমস হাউজ’র ডেপুটি কমিশনার মোঃ মেহেবুব হক বলেন, করোনা মহামারীর কারনে কিছুটা বিলম্ব হলেও তার মধ্যেও আমরা নিলাম প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। গাড়ি থেকেই আমাদের ৬০ ভাগ রাজস্ব পেয়ে থাকি। তাই মোংলা কাস্টমস হাউজের রাজস্ব খাতে গতিশীলতা আনতে এখন থেকে প্রতি মাসেই দুইটি করে নিলাম প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবো। এ মাসে ১/২০২২ নামের নিলাম সেল সমাপ্ত করা হলো, ১৩৭টি লটের বিপরীতে ৪০টি বিট পড়েছে। এখন নিয়মানুযায়ী এ বিটগুলো যাচাই-বাছাই করে যারা সর্বোচ্চ দরদাতা হবে তাদের নামের তালিকা কাস্টমস’র কার্যালয়ে টানিয়ে দেয়া হবে। এরপর নিলাম কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর গাড়িগুলো নিলাম দরের সমমান বা আইনানুযায়ী ৬০% কভার করে অথবা নিয়ম-কানুনের মধ্যে দেয়া যায় সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। এ নিলাম প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যদি সময় মতো গাড়িগুলো খালাস করিয়ে নেয় তাহলে রাজস্ব আদায় হবে এবং রাজস্ব প্রবিদ্ধও বৃদ্ধি পাবে বলে জানায় কাস্টমস’র এ কর্মকর্তা।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৩ জুন হক্স-বে অটোমোবাইল কোম্পানি প্রথম ২৫৫টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির মধ্য দিয়ে মোংলা সমুদ্র বন্দরে গাড়ি খালাস ও মজুদ রাখার কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময়য়ের পর থেকে আমদানিকৃত গাড়ির অনুকুলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে থাকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।