বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে পরিণত হয়েছে। এর অবস্থান এখন কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমেটিার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে। রোববার সকালে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপাটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে পরিণত হয়েছে। এটি একই এলাকায় অবস্থান করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল ৬টার দিকে আসানি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমেটিার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুন্দ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এই ঘূর্ণিঝড় আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুন্দ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এর আগে শনিবার আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার পরই কেবল বলা যাবে যে এটি কোন পথে এগুবে এবং কেমন মাত্রায় কোথায় আঘাত হানবে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা দেশের আবহাওয়া কেমন থাকবে তা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর দু-এক জায়গায় দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ নিয়ে কথা বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের ওড়িশা, পশ্চিম বাংলা হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানতে পারে। এটি মোকাবিলায় এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘অশনি’ দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোনসংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদের জন্য আতঙ্কের নামান্তর। কয়েক বছর পরপরই সামুদ্রিক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে এখানকার জনজীবন। ২০০৭ সালে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। এটি কেড়ে নেয় হাজার মানুষের প্রাণ।
ওই ধাক্কা সামলে না উঠতেই ২০০৯ সালে আঘাত হানে আইলা। প্রাণহানিসহ মানুষের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি, মৎস্যসহ অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করে উঠতে না উঠতেই ২০২০ সালে আবার আঘাত হানে আম্ফান।